এক মাস পর রোজা। এ সময় বাজারে চিনির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। অথচ চিনির দাম এখনই চড়া। অন্যদিকে নেই পর্যাপ্ত মজুতও। প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না দোকানে। আর খোলা চিনি এই আছে তো এই নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিও করেও চাহিদামতো চিনি মিলছে না। মিলাররা চাহিদা ও সময়মতো চিনি সরবরাহ করছে না। তিন মাস আগের ডিও’র চিনিও হাতে আসছে না। এমন অবস্থায় রমজানে চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
বিজ্ঞাপন
Ad
বাজারের এমন পরিস্থিতি তৈরি করা দেশের কোম্পানিগুলোর পুরনো কৌশল বলে মনে করছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। সংস্থাটি বলছে, রোজার মাস এলেই নানাভাবে সংকট তৈরির খেলায় মত্ত থাকে কোম্পানিগুলো। সরকার থেকে এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হলে রমজানে চিনির বাজার অস্থির হয়ে যাবে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বলছে, প্রতি মাসে দেশে চিনির চাহিদা ১ লাখ ৫৮ হাজার টন। বছরে ১৯ লাখ। রমজান এলেই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ টনে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে রমজানে সংকট আরও বাড়ার শঙ্কায় চিনি ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, রমজানে চিনির চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। চাহিদা বাড়লে যদি সরবরাহ আগেই মতোই থাকে তবে ঘাটতি বেড়ে যাবে। ফলে দাম বাড়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। কিছু পরিশোধিত চিনি যদি রমজানের আগে আমদানি করা যায় তবে এই ঘাটতিটা পূরণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান মানবজমিনকে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনির মজুত নেই বলে মনে করি। কারণ, এলসি খোলা যাচ্ছে না। ডলার সংকট রয়েছে। গ্যাসের বিল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বেড়েছে বিদ্যুৎ খরচ। এই সমস্যাগুলো সমাধান করা হলে চিনির বাজার স্বাভাবিক হবে। সবাই চিনি আমদানি করতে পারবে। তিনি বলেন, রোজা তো সবার জন্যেই। এক্ষেত্রে তো সবাই মিলেই কাজ করতে হবে। কিন্তু আমরা চলার পথে কাউকে সঙ্গে পাই না। তবে আমরা প্রাইভেট মিলগুলো চেষ্টা করছি স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে।
আগামী রমজান মাসে মানুষকে কম চিনি খাওয়ারও পরামর্শ দেন সংগঠনটির এই নেতা। বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সরোয়ার বলেন, সরকার যদি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে দেশের বাজার পরিস্থিতি কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ, দেশ চালায় সরকার। সবকিছু সরকারের উপরই নির্ভর করবে। তিনি জানান, আমার মনে হয় দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত চিনি মজুত রয়েছে। মাত্র একমাস হলো সুগার মিলগুলো বন্ধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে চিনি মজুত না থাকার কোনো কারণ দেখছি না। রোজার মাসে চিনির চাহিদা বেড়ে যাবে। আর চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এটা বাড়ানোর দায়িত্ব সরকারের। ব্যবস্থা না নিলে চিনির বাজার অস্থির হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কাস্টম্স এর তথ্য অনুযায়ী দেশে যথেষ্ট পরিমাণে এলসি খোলা ও চিনি আমদানি করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও তারা সংকট সৃষ্টি করে।
এটা নতুন কিছু না, তাদের পুরনো কৌশল। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো সরবরাহ লাইনে সমস্যা তৈরি করে। যেমন: কোনো কোম্পানির যদি ১০০ জন ডিলার থাকে তাহলে তারা সব ডিলারকে পণ্য না দিয়ে ২জন ডিলারকে পণ্য দেয়। এর ফলে বাকি ৯৮জন ডিলার পণ্য না পেলে একটা হাহাকার তৈরি হয়। পরবর্তীতে সংকট দেখিয়ে দাম বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতেও তারা বেশি সময় নিয়ে থাকে। এছাড়া গুদামেও মজুত রাখে। এসএম নাজের হোসেন বলেন, এখন সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসা। সরকার থেকে তাদেরকে বলতে হবে তোমরা যদি বাজারে চিনি না ছাড়ো তাহলে আমরা আমদানি করবো। সেই সুযোগও সরকারের আছে। ভারত থেকে রমজানের আগে রিফাইন সুগার আমদানি করা যেতে পারে। তাতে রমজানে চিনির বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
সোর্স : মানবজমিন