এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে ডলার সংকট, পাশাপাশি বাড়ছে দাম। এ কারণে এবার রমজানের অন্যতম ইফতারি পণ্য খেজুর আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ফলে বাজারে পড়েছে এর প্রভাব। সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও রমজানের প্রায় দেড় মাস বাকি। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, রমজানে খেজুরের দাম আরও বাড়তে পারে।
আমদানিকারকরা বলছেন, অধিকাংশ খেজুর আসে জাহাজে করে। উড়োজাহাজে আসে খুব সীমিত। এর সঙ্গে রয়েছে বন্দরের নানা জটিলতা। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে দেশের বাজারে খেজুরের সরবরাহ নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। তাই বন্দর থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সপ্তাহ দুয়েক ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। এর মধ্যে মরিয়ম খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও প্রতি কেজি কেনা গেছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। আজোয়া বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। এতদিন এগুলোর দাম ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার ঘরে। খুরমা ও দাবাস খেজুরের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এ ছাড়া সাধারণ মানের খেজুরের দামও বেড়েছে, যেগুলো জাহেদি খেজুর নামেও পরিচিত। আমদানির সিংহভাগই জাহেদি। এটি সবচেয়ে বেশি আসে ইরাক থেকে। বাজারে এ ধরনের খেজুরের দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে খেজুরের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী মো. মামুন বলেন, ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে বাড়ছে খেজুরের দাম। অন্য বছর রমজানের দুই মাস আগেই খেজুর কিনে রাখি। তবে এবার বাদামতলীতে খেজুরের পাইকারি বাজারে দাম আগেই বেড়েছে। সেই কারণে মজুত করিনি।
খেজুর আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটাই আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চল থেকে। ২৫ থেকে ৩০ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। সারা বছরে খেজুরের যে চাহিদা থাকে, এর চেয়ে তিন থেকে চার গুণ চাহিদা বেড়ে যায় রমজানে। তাঁদের ধারণা, রমজানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন খেজুরের দরকার হয়। সেই চাহিদা মেটাতে পাঁচ-ছয় মাস আগে থেকেই খেজুর আমদানি করে হিমাগারে মজুত করেন তাঁরা।
গত নভেম্বরের দিকে খেজুর আমদানির মৌসুমের সময়ে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। যে কারণে সময়মতো অনেকেই এলসি খুলতে পারেননি। গত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম। তবে সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপের ফলে এলসি মোটামুটি খোলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলেছে, জানুয়ারিতে খেজুরের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৯৮ টনের। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ হাজার ৯৮১ টন বেশি। তবে পণ্য ঠিক সময়ে আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সংকট না হলেও এবার খেজুরের দাম বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলসি খোলার সুযোগ হয়েছে ঠিকই। তবে তা অনেক দেরিতে হয়েছে। আগে ৫ শতাংশ মার্জিন দিয়ে এলসি খোলা যেত। এখন বেশিরভাগ ব্যাংকে শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে হচ্ছে। এ ছাড়া ৯০ দিন পর টাকা পরিশোধ করার সুযোগ দিয়ে এলসি খোলার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে বড় কিছু আমদানিকারকের সুবিধা হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে কেউ কেউ এলসি খুলতে পারছেন। তবে সব মিলিয়ে ছোট আমদানিকারকরা আমদানি করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ডলারের কারণে আমদানি খরচও বেশি হচ্ছে। গত বছরের ৮৫ টাকার ডলারের দাম এখন ১০৫ টাকা। শুল্ক্কও বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবার রমজানে খেজুরের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্দর থেকে খেজুর খালাসের সুযোগ দেওয়া হলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে না।’
সোর্স : সমকাল