চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় খাদ্য প্রস্তুত ও বিপণনকারী ‘ওয়েল ফুড’-এর একটি বিপণনকেন্দ্রে গিয়ে সাইফুল চৌধুরী নামের এক ক্রেতা কোকোনাট কুকিজের এক প্যাকেট বিস্কুট কেনার সময় এক বিপণনকর্মী দাম চাইলেন ২৩০ টাকা। এ সময় ওই ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহেও ২১০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন ২৩০ টাকা কেন? তখন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘সব কিছুর দাম বেড়েছে, তাই বিস্কুটের দামও বেড়েছে।’
এ ঘটনা গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল পৌনে ৪টার দিকের। নতুন দামে দুই প্যাকেট বিস্কুট কিনে বের হওয়ার সময় ওই বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে সাইফুল চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি ২১০ টাকায় এক প্যাকেট বিস্কুট কিনেছিলাম। ৩০০ গ্রাম ওজনের এই প্যাকেটে ২০টি বিস্কুট আছে। এখন দাম বাড়ার পর হিসাব করে দেখলাম প্রতিটি বিস্কুটের দাম সাড়ে ১১ টাকা করে পড়েছে। চিনি, আটা, ময়দাসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের খাদ্যপণ্যগুলোরও দাম বাড়ানো হয়েছে।’
একই প্রতিষ্ঠানের নগরের ষোলোশহর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিপরীতে আরেকটি বিপণনকেন্দ্রে এক ব্যক্তি ৪০০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট বেলা বিস্কুটের দাম ১২০ টাকা দেখে চমকে ওঠেন। গত বছরের মাঝামাঝি দুই থেকে তিন দফায় দাম বাড়ানোর পর ডিসেম্বরেও ওই বিস্কুটের দাম ছিল ৯৫ টাকা। কিন্তু এখন ১২০ টাকা কেন জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী বলেন, দাম বেড়েছে। আরেক বিক্রয়কর্মী বলেন, ৯৫ টাকার পরে গত এক মাসে আরো দুইবার দাম বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছিল। এখন প্রতি প্যাকেট ৪০০ গ্রামের বেলা বিস্কুটের দাম ১২০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু বিস্কুট নয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়েল ফুডের পাঁচ শতাধিক আইটেমের সবটিতেই ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নামকরা এই প্রতিষ্ঠানের বেলা বিস্কুট চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামে উৎপাদন ও প্রস্তুতকৃত বনফুল গ্রুপের ২৭৫ গ্রামের কিষোয়ান সলটিন বিস্কুটের দাম আগে ৫৫ টাকা ছিল। তা এখন বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা। চকবাজারের চট্টলা বেকারির সব আইটেমেও অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এক ক্রেতা বলেন, এক কেজি বিস্কুটের দাম গত প্রায় দুই বছরের ব্যবধানে দফায় দফায় বেড়ে এখন ৩০০ টাকা হয়েছে। আগে এই বিসু্কট ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ছিল।
এদিকে চট্টগ্রামের আরেকটি নামি প্রতিষ্ঠান হাইওয়ে সুইটস অ্যান্ড কনফেকশনারিজে বেকারি ও মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দাম আবারও বাড়ানো হচ্ছে। আরো কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে বলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়।
গত বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পরও চট্টগ্রামের নামিদামি ছোট-বড় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে ছিল। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমলেও দেশীয় বাজারে এখনো এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। বরং বিস্কুট, মিষ্টি, চানাচুরসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম যে যেভাবে পারছে সেভাবেই বাড়িয়ে দিয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৪০ টাকার আটা এখন ৭০ টাকা। সব কিছুর দাম বেড়েছে। দাম বাড়ানো হলেও লাভ নেই। লসে (লোকসানে) আছি। লস কমানোর জন্য দাম বাড়ানো হয়েছে।’
হাইওয়ে সুইটস অ্যান্ড কনফেকশনারিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুরাদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছয় মাস আগে ৪০০ গ্রাম ওজনের স্পেশাল বেলা বিস্কুটের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা করা হয়েছিল। তা এখনো বহাল আছে। তবে দুই মাস আগে সাধারণ মিষ্টির দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়েছি। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমলেও দেশে সেভাবে কমেনি। সামনে বিস্কুটসহ আমাদের শখানেক খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হবে।’
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ানো অব্যাহত রয়েছে। আমার প্রশ্ন, যাঁদের দাম বাড়ার বিষয়টি মনিটর করার কথা, তাঁরা কেন মনিটর করছেন না। দাম বাড়ার কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেকারি আইটেমগুলোর মূল্য সরকার নির্ধারণ করে না। তারা (প্রতিষ্ঠানগুলো) নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বসায়। তবে কেন দাম বাড়িয়েছে, তা আমরা জানি না। এটা তাদের জিজ্ঞেস করেন।’
সোর্স : কালের কন্ঠ