কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এক মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিষয়ে অন্য মন্ত্রণালয় প্রকল্প নিয়েছে, আছে সেই নজিরও। তবে প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের বিদেশে পিএইচডি (ডক্টর অব ফিলোসফি) ডিগ্রি নেওয়ার আয়োজন আগে কখনও শোনা যায়নি। ডলার সংকটের এ সময়ে এমন উদ্যোগই নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। ব্রির ভৌত সুবিধা জোরদার করার এক প্রকল্পে তিন কর্মকর্তাকে দেশের বাইরে ও দুই কর্মকর্তাকে দেশে পিএইচডির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি নেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ৮৫ প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থগিত রয়েছে ৬৩৬ প্রকল্পের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ। অর্থ সাশ্রয়ের এমন নীতির মধ্যেই ডলার খরচ করে কর্মকর্তাদের বিদেশি পিএইচডি করার সুযোগ রেখে প্রকল্প প্রস্তাব গেছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির নাম ‘স্থানভিত্তিক ধানের জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও ভৌত সুবিধাদি জোরদারকরণ’। অনুমোদন হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ব্রি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা। এতে বিদেশি কোনো ঋণ কিংবা অনুদান নেই। সরকারি অর্থেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ এর আওতায় কর্মকর্তাদের বিদেশে পিএইচডির সুযোগ দেওয়া হলে সরকার থেকেই ডলারের সংস্থান করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, সরকারি খরচে কর্মকর্তাদের বিদেশে পিএইচডির ঠিক সময় এখন নয়। এ কাজ প্রস্তাবিত প্রকল্পের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ নয়। তিন কর্মকর্তার বিদেশি পিএইচডির অর্থায়ন তাই প্রকল্প প্রস্তাব থেকে বাদ দিতে হবে। এদিকে বিদেশে পিএইচডি ছাড়াও প্রকল্পে অতিরিক্ত গাড়ি কেনা এবং ছয়টি স্যাটেলাইট স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। এসব বিষয়ে আপত্তি তুলেছে কমিশন এবং প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করছে। এ বিভাগের সদস্য ও সচিব এ কে এম ফজলুল হক সমকালকে বলেন, সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি সব ব্যয়ে কৃচ্ছ্র চলছে। ফলে পিএইচডির ব্যয় নির্বাহের জন্য এখন ভালো সময় নয়। এ রকম আরও কিছু বিষয়ে আপত্তি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ব্রি মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর সমকালকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি এবং সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশের বদলে দেশেই পিএইচডি করার ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য আপত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মান নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি ছিল। এ কারণে তিনবার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। নিরপেক্ষ এবং মানসম্পন্ন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ডিপিপির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয় সম্প্রতি। এতে প্রকল্পের অধীনে ছয়টি স্যাটেলাইট স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাবের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ব্রির আওতায় ১১ আঞ্চলিক অফিস থাকার পরও নতুন করে এসব স্যাটেলাইট স্টেশনের কোনো প্রয়োজন নেই।
ডিপিপিতে ছয়টি স্যাটেলাইট স্টেশনের জন্য আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে আলাদা ১২টি গাড়ি সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর জ্বালানি খরচও চাওয়া হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে, গাড়ি আউট সোর্সিং করার পরও আলাদা জ্বালানি খরচ লাগবে কেন। ১২টি গাড়ির বদলে একটি কেনার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণে বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়েও আপত্তি তুলেছে কমিশন। প্রকল্পের সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত খরচের চেয়ে বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে ভূমি অধিগ্রহণে প্রাক্কলিত খরচ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাবে তা উল্লেখ নেই।
সূত্র জানায়, ডিপিপিতে বিভিন্ন অসংগতির কারণে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি। কমিটি বলেছে, অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠান দিয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সোর্স : সমকাল