পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা আমদানির দায় পরিশোধ না করলে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। দ্রুত আমদানির উদ্যোগ না নিলে মার্চে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গ্রীষ্ফ্ম মৌসুমে কেন্দ্রটি চালু রাখতে বকেয়া পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-বিসিপিসিএল প্রাথমিকভাবে নিজস্ব অর্থায়নে স্বল্প পরিমাণে কয়লা আমদানিতে সক্ষম হলেও পরিচালন মূলধন সংকট ও বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নিয়মিত কয়লা আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সিএমসি’র অর্থায়নে কয়লা আমদানির ১৮০ দিন পর বিল পরিশোধের প্রস্তাব করলে তাতে রাজি হয় সংস্থাটি। ২০২০ সালের এপ্রিলে হওয়া একটি চুক্তির আওতায় চীনা কোম্পানি সিএমসি গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থায়ন করে। গত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএমসির পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৪৮ কোটি ডলার। ১৮০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা হয়নি এমন অনাদায়ী বকেয়া ছিল ১৫ কোটি ডলার। তবে গত ১৭ জানুয়ারি ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়।
সিএমসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনাদায়ী বকেয়ার জন্য তাদের এবং তাদের ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং অনেক কমে গেছে। তাই পুরো বকেয়া পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা কয়লা আমদানিতে অর্থায়ন করবে না। এমনকি পাওনার পুরো অর্থ পাওয়ার পর এক্ষেত্রে আরও অর্থায়ন করা হবে কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। এসব কারণে গত ১ জানুয়ারি থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। বিসিপিসিএল জানায়, পুরো বকেয়া পাওয়ার পর আবার যদি সিএমসি অর্থায়ন করে তারপরও কয়লা আমদানি কার্যক্রম শুরু করতে সময় লাগবে ৪০ থেকে ৪৫ দিন।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানি বিদ্যুৎ বিভাগকে আরও জানিয়েছে, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় পরিচালনার জন্য প্রতিদিন ১২ হাজার টন হিসেবে মাসে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। গত জানুয়ারি থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে তা দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও ডলারের সংস্থান না হলে আগামী গ্রীষ্ফ্ম মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ মার্চ মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে গরমকালে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়তে পারে।
বিসিপিসিএল আরও জানিয়েছে, পায়রা সমুদ্রবন্দরের সীমাবদ্ধতার কারণে বড় জাহাজের কয়লা বিভিন্ন চালানে বিভক্ত করে ছোট ছোট জাহাজে আমদানি করতে হয়। এ অবস্থায় কয়লার দাম পরিশোধ ও জাহাজ ভাড়া বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা এবং আমদানি শুল্ক্ক, পোর্ট চার্জ, হ্যান্ডলিং চার্জ ইত্যাদি তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা আবশ্যক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এম খোরশেদুল আলম সমকালকে বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় এখনও কয়লা আমদানি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত কয়লা আমদানি শুরু করতে না পারলে কেন্দ্র চালু রাখা সম্ভব হবে না।
দেশীয় কয়লা দিয়ে কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লা লাগে। বাংলাদেশে এত পরিমাণ কয়লা উত্তোলনের সক্ষমতা নেই। তাই আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হবে। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবটি তারা পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সমকালকে বলেন, প্রয়োজনীয় পরিমাণ উৎপাদন না হওয়ায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে ভোক্তা। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে আগামী গ্রীষ্ফ্মে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
দেশের সর্ববৃহৎ আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত বছরের ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। একই বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
সোর্স : সমকাল