গত বছর থেকে ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তা শেষ করতে পারেনি। এতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমও শুরু হয়নি। অথচ পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে গত বছর আলাদাভাবে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রথম সেমিস্টার শেষে দ্বিতীয় সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছিল গত বছরের ১৫ জুন। আগামীকাল বুধবার এই ভর্তি কার্যক্রমের আট মাস পূর্ণ হবে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ভর্তির আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইগ্রেশনে দীর্ঘসূত্রতা এই ভর্তিপ্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ার অন্যতম মূল কারণ। মেধাতালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগের ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনতে হবে। এভাবে ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো সম্ভব। একই সঙ্গে কোনো বিভাগের আসন শূন্য থাকার সমস্যাও থাকবে না।
গত বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিতে আসনসংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৬৬৮। এসব আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে দুই লাখ ৯৭ হাজারের বেশি, যেখানে আসনসংখ্যার কয়েক গুণ বেশি শিক্ষার্থী যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এর পরও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় থাকা কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য আসন পূরণে আট থেকে ১২ বার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়েছে।আসন ফাঁকা থাকার চারটি কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে মাইগ্রেশনে ধীরগতিকেই মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন তাঁরা। এ ছাড়া রয়েছে একজন শিক্ষার্থীর একাধিক আসন ধরে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে না পারা, শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় না পাওয়া এবং প্রতিটি জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক, উপাচার্য ও শিক্ষাবিদরা আসন ফাঁকা থাকার এসব কারণ উল্লেখ করেন।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মেধাতালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনতে হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেই ভর্তিতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অবসান সম্ভব। পাঁচ থেকে সাত দিন পর পর ভর্তির তালিকা প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন। এভাবে সময় কমিয়ে আনা সম্ভব।
ভর্তির সফটওয়্যার পরিবর্তনের কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ইমদাদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তিপ্রক্রিয়া দু-তিন মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। আমরা যেন জুলাইয়ের সেশন ধরতে পারি, সে লক্ষ্যে সফটওয়্যারে কাজ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে শিগগিরই এ বিষয়ে সভার আয়োজন করা হবে।’
বর্তমানে সফটওয়্যারে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেডিক্যালের বিষয়ে কোনো চয়েস নেই, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষিতে মাত্র চারটি বিষয়। আমাদের শত শত বিষয়, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি ও বিষয় আলাদা। আবার বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বিষয়ের নামেও পরিবর্তন রয়েছে। এসব বিষয় গুচ্ছের সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করে তা পরিচালনা করায় ভর্তির প্রক্রিয়া ধীরে হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ১৯৫টি আসন ফাঁকা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি এসব আসনের বিপরীতে ১২তম মেধাতালিকা এবং ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩১ জানুয়ারি অষ্টম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও ১৯০টি আসন পূরণ করতে পারেনি। ফাঁকা আসনের বেশির ভাগ মানবিক ও কলা বিভাগসহ জিওগ্রাফি ও সাইকোলজি বিষয়ে। এসব আসন ফাঁকা রেখেই চলতি মাস থেকে ক্লাস শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন পূরণে গুচ্ছে আটবার মেধাতালিকা প্রকাশ ছাড়াও দুইবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিভিন্ন কোটায় ১০০টি আসন থাকলেও শর্ত পূরণ করে মাত্র ২১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফিজিক্যাল সায়েন্সের ডিন ও প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি পরীক্ষা কমিটি ২০২১-২২-এর সভাপতি অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বিষয় নির্দিষ্ট করে আবেদন পদ্ধতি এ বছর থেকেই চালু হয়েছে। আগে ভর্তি পরীক্ষার পর আমরা বিষয়ভিত্তিক ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেধাতালিকা থেকে আসন পূরণ করেছি। এখন শিক্ষার্থীরা প্রথমে ভর্তি হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে একজন শিক্ষার্থীর চার-পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন ধরে রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি হলো দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ। শিক্ষার্থীদের কিছু পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় থাকে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী বাড়ির কাছের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চায়। আবার কোটার শর্ত পূরণ করে শিক্ষার্থী না পাওয়ায় সেসব আসনও ফাঁকা থাকছে।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সমস্যা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ের সংখ্যাও অনেক বেশি। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগায় ভর্তিপ্রক্রিয়ায় দেরি হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
মাইগ্রেশনে ভোগান্তি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম লুত্ফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুনেছি কিছু ছাত্র জগন্নাথে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। ভর্তি ব্যবস্থাপনা আরো সহজ করতে হবে। ভর্তিতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভুগছে। এই ভর্তিপ্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজাতে হবে, যেন সময়ের মধ্যে ভর্তি কাজ শেষ করতে পারি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আস্থা আনতে হবে যে তাদের কোনো সেশনজটের মধ্যে পড়তে হবে না।’
সোর্স : কালের কন্ঠ