দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার এবং দ্বৈত নাগরিকদের বিদেশে বাড়ি ও সম্পত্তি কেনার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, এ দেশ কি হরিলুটের জায়গা। আদালত বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের হার্ট দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। আদালত বলেন, অর্থ পাচার রোধে শুধু মামলা করলেই হবে না। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো সম্পদ চিহ্নিত করে তা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে এ বিষয়ে তদারকি থাকা দরকার। এ দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে তা বন্ধে আইন ও গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার সংবিধান ও আইন অনুসারে বাংলাদেশ থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন কোনো ব্যক্তি বিদেশে সম্পত্তি কিনতে পারেন কিনা তা নিয়ে এ বিষয়ে শুনানিতে এসব কথা বলেন।
শুনানিতে আদালত দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে আপনার আইন নেই। ম্যাকানিজম নেই। কিভাবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসবে? আদালত আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশের সম্পদ চিহ্নিত করতে পারলে যদি ফিরিয়ে না আনতে পারে তা হলে ট্যাক্স ধরে। আমাদের বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যথাযথ পদক্ষেপ ছাড়া কিভাবে এসব অর্থ দেশে ফিরে আসবে।
এ সময় আদালত বলেন, কিভাবে দ্বৈত নাগরিকরা ব্যাংক থেকে লোন নেন? এ সময় আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, একমাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বের বাধা আছে। অন্য ক্ষেত্রে নেই।
শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক নিয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যাংক লুট শুরু হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের ব্যাংক লোন দিতে পারে কি? জবাবে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশের নাগরিকদের জন্য যে ক্রাইটেরিয়া, দ্বৈত নাগরিকদের জন্য একই ক্রাইটেরিয়া। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোনো টাকা দেশের বাইরে যায় না। তিনি বলেন, কেউ যদি বলেন, আমি ৫০ টাকা কানাডা নিয়ে যাব তাহলে লোন পাবে না। তিনি বলেন, এ দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে তা বন্ধে আইন ও গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। দ্বৈত নাগরিকদের বিষয়টি আইন অনুযায়ী হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আদালত রুল ইস্যু করতে পারেন।
এ দিন শুনানি শেষে গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রশ্ন জড়িত থাকায় দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন ব্যক্তিরা বিদেশে সম্পত্তি কিনতে পারেন কিনা তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট। এজন্য আদালত আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে শুনানিতে প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুসারে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে আয় করা অর্থে বিদেশে সম্পদ কিনতে পারবেন কিনা প্রশ্ন তোলেন। হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব দেশপ্রেমকে বিভক্ত করতে পারে। ‘বিদেশে সম্পদ কেনার উৎসব’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ আদালতের নজরে এলে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই প্রশ্ন তোলেন। আদালত বলেন, যারা দ্বৈত নাগরিক তাদের দেশপ্রেম দুই ভাগে বিভক্ত। তারা টাকাটা নিয়ে ওদেশে চলে যাচ্ছে। কাজেই এসব ক্ষেত্রে সংবিধানের ব্যাখ্যাও রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চান হাইকোর্ট।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে খবরটি প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ আমলে নিয়ে সংবিধান ও আইন অনুসারে বাংলাদেশ থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন কোনো ব্যক্তি বিদেশে সম্পত্তি কিনতে পারেন কিনা এবং তাদের দায়িত্ব ও দায় সম্পর্কে সংবিধান ও আইনে কী আছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে সোমবার এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদও এ বিষয়ে আদালতের বক্তব্য শুনতে চান। সে অনুসারে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও মনজিল মোরসেদ বক্তব্য দেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের পর দুবাই ও লন্ডনে হিড়িক পড়েছে সম্পদ কেনার। আগে আগ্রহের স্থান ছিল সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। এখন সম্পদ কেনার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে বাংলাদেশীরা এখন সম্পদ কেনায় ধনী দেশের নাগরিকদের টপকিয়ে দখল করে নিচ্ছেন শীর্ষস্থানগুলো।
সোর্স : নয়া দিগন্ত