নতুন পাঠ্যসূচির দু’টি বই বাতিল করায় ৪০ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে। যদিও বিতর্কিত বই দু’টি ছাপানোর আগে থেকেই সমালোচনা শুরু হয়েছিল। এর পরেও কেন বই ছাপিয়ে বড় অঙ্কের টাকার ক্ষতি করা হলে সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবেশি ৫৫ লাখ। অর্থাৎ দুই শ্রেণীতে বাতিল করা বইয়ের সংখ্যাও ৫৫ লাখ হবে। এই বড় সংখ্যার বই বাতিল করায় সরকারেরও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলো। অন্য দিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দাবি করেছে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন না। যেহেতু ভুল ভ্রান্তি এবং অসঙ্গতি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তাই বই দু’টিই বাতিল করা হয়েছে। আর এতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না। কেননা এই বই দু’টির বিকল্প বই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী নামে আরো দুই বই তারা শ্রেণিকক্ষে পড়তে পারবে।
এনসিটিবির উৎপাদন শাখার এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বাতিল করা বই দু’টি প্রতিটির উৎপাদন খরচ ছিল গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সেই হিসাবে মোট ক্ষতি দাঁড়ায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক ছাপার সাথে সম্পৃক্ত প্রেস মালিকরা জানান, কাগজের দামের সাথে অন্যান্য খরচ যেমন কালি, গাম, প্লেট এবং শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হিসাব করলে বইপ্রতি খরচ দাঁড়াবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ দু’টি শ্রেণীর মোট ৫৫ লাখ বই বাতিল করায় সরকারের গচ্ছা গেছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, এনসিটিবি দায়সারা সিদ্ধান্ত, একগুঁয়েমি, তাড়াহুড়া ও অপরিকল্পিতভাবে কাজ করায় এখন বই নিয়ে এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এক দিকে সরকারের বিপুল টাকার অপচয় হলো, অন্য দিকে শিক্ষার্থীরাও ক্ষতির মুখে পড়ল।
উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই দু’টি বই নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হলে সরকারি সংস্থা এনসিটিবি গত শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ‘২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ পাঠ্যপুস্তক দু’টি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হলো। যদিও এর আগেই চলতি বছরের শুরু থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ওই দু’টি বইয়ের নাম একই।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সাথে সম্পৃক্ত এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানান, মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পরীক্ষামূলকভাবে গত বছরই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন বইও দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে চলা শিক্ষাক্রম মূল্যায়নের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পূর্ণমাত্রায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার কথা। বেশির ভাগ বইয়ের ক্ষেত্রে এই কাজ করা হলেও প্রত্যাহার করা দু’টি বই এবং সংশোধনের তালিকায় থাকা বইগুলো পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করা হয়নি। শেষ সময়ে তাড়াহুড়া করে বই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করায় এখন বই দু’টিই বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে এনসিটিবি। দু’টি বই প্রত্যাহারের বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো: মশিউজ্জামান জানান, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ বইটি মূল বই।
আর ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি (প্রত্যাহার করা) মূলত ‘রিসোর্স বই’। ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দু’টি প্রত্যাহার করা হলেও ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা থেমে থাকবে না। ‘অনুশীলনী পাঠ’ বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষকেরা তা পড়াবেন।
সোর্স : নয়া দিগন্ত