বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের পানি আগ্রাসন মোটেই কোনো নতুন খবর নয়। এই আগ্রাসনের একটি প্রধান দিক হলো নদ-নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি কিছু এলাকায় এমনভাবে পানি ছেড়ে দেয়া, যাতে পানির প্রবল তোড়ে এলাকার পর এলাকা জুড়ে ফসলের ক্ষেত ও মানুষের বাড়িঘর ডুবে যায়। যাতে বিরাট বিরাট টিনের ঘর ভেসে যায়। বৃহত্তর সিলেট জেলার মতো অঞ্চল বিশেষের নামোল্লেখ করার পরিবর্তে বলা দরকার, প্রতি বছরই দেশের কয়েকটি পর্যন্ত এলাকা ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ভীষণভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সহজবোধ্য বিশেষ কারণে এসব দৃশ্য ও খবর দেশের কোনো টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে প্রচারিত হতে পারে না। এমনকি স্বাধীন নামে পরিচিত অনলাইন গণমাধ্যমকেও প্রচারের ঝুঁকি নিতে দেখা যায় না। ফলে ভারত দিব্যি তার আগ্রাসন চালিয়ে যেতে পারছে।
এমন অবস্থার মধ্যেই সম্প্রতি কথা উঠেছে বিশেষ কিছু কারণে। তেমন একটি কারণ হলো, কৃষি, ফসল ও নদ-নদীর পাশাপাশি আরো অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। এরকম একটি ক্ষেত্র হিসেবে প্রাধান্যে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গতকাল, ১২ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় খবরের শিরোনামে বলা হয়েছে, “নড়িয়া ও জাজিরায় নদীভাঙন : এক যুগে বিলীন হয়ে গেছে ২০টি বিদ্যালয়”।
রিপোর্টে শরীয়তপুরের চরজুজিরা সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে এমন কিছু স্কুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব স্কুলে এক সময় গড়ে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর কোথাও কোথাও নদীর তীরে জমি ইজারা নিয়ে এবং সেসব স্থানে ছাপরা তুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অধিকাংশ স্থানে আবার সেটুকুও করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ওই সব এলাকায় সরকারি প্রাইমারি স্কুলই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও।
উল্লেখ্য, নদ-নদীকেন্দ্রিক বাস্তব পরিস্থিতি নৈরাশ্যজনক শুধু নয়, ভীতিকরও। কারণ, কয়েকটি মাত্র নদ-নদী এখনও কোনোভাবে চলমান তথা বেঁচে থাকলেও বেশিরভাগই ইতিহাসের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি নদ-নদীই এখন আর চলমান বা বহমান তো নেই-ই, সেগুলো আগের অবস্থায়ও নেই।
উদাহরণ দেয়ার জন্য প্রথমে এককালের প্রমত্তা নদী পদ্মার কথা বলা দরকার। মাত্র দশক তিন-চারেক আগেও যে পদ্মার এক কূল থেকে আরেক কূল দেখা যেতো না, ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে তীরে আছড়ে পড়তো এবং শিশু-কিশোররা দূরে থাকুক, যুবক ও অভিজ্ঞ জেলে ও কৃষকরা পর্যন্ত তীরের ধারে-কাছে যাওয়ার সাহস পেতো না, সে প্রমত্তা পদ্মার দশাই এখন অতি শীর্ণ হয়ে পড়েছে। এখন আর কোনো কবি ও গীতিকার ‘পদ্মার ঢেউরে’ দিয়ে কবিতা বা সংগীত লেখা শুরু করার কথা চিন্তা করতে পারেন না। বেশ কয়েক বছর ধরে শুকনো মওসুম শুরু না হতেই পদ্মা সরু খালে পরিণত হচ্ছে। গণমাধ্যমের সচিত্র রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ি থেকে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর মুখ পর্যন্ত বিরাট এলাকাজুড়ে পদ্মা অনেকাংশে মৃত নদীর রূপ নিয়েছে। ভারত ফারাক্কাসহ অসংখ্য বাঁধের পাশাপাশি যথেচ্ছভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় এবং ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি না পাওয়ার ফলে পদ্মার কোথাও আজকাল পানি থাকে না বললেই চলে। একযোগে বিস্তার ঘটেছে অসংখ্য চরের। পদ্মার দুই তীর ঘেঁষে এখন শত শত চর।
শুধু তা-ই নয়, পানি না থাকায় হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে ১৫টি পিলারের মধ্যে ১২টিই দাঁড়িয়ে আছে শুকনো চরের মধ্যেÑ মূল নদীর অনেক বাইরে। যে তিনটি মাত্র পিলার সামান্য পানির মধ্যে রয়েছে সেখানেও কৃষকরা চাষাবাদ করছে। কিছুদিন আগেও খন্ড খন্ড অনেক ক্ষেতের ছবিসহ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফসলের সমারোহ এখন সেই পদ্মার বুকজুড়ে, যা এককালে ছিল ‘প্রমত্তা’। শুকনো মওসুম শুরু হতে না হতেই মাইলের পর মাইল জুড়ে চর পড়ে পদ্মা পরিণত হয়েছে অতি সরু একটি খালে। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গঙ্গার পানি সরিয়ে নেয়ার ফলেই এমন করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মাই শুধু নয়, এর শাখা-প্রশাখাসহ ৩৬টি নদ-নদীও শুকিয়ে গেছে। চাষাবাদ তো করা হচ্ছেই, এসবের ওপর দিয়ে ভারি যানবাহনও চলাচল করছে। বিভিন্ন স্থানে পানির পরিমাণও এতই কমে গেছে যে, জেলেরা এমনকি নিজেদের খাবার মতো মাছও ধরতে পারছে না। অর্থাৎ পদ্মা তার স্বরূপ খুইয়ে ফেলেছে সম্পূর্ণরূপে।
বলা দরকার, সবকিছুর পেছনে রয়েছে ভারতের প্রতারণাপূর্ণ কৌশল ও পানি আগ্রাসন। ফারাক্কার পাশাপাশি নানা নামের অসংখ্য বাঁধ বা ব্যারাজ এবং জঙ্গিপুরের কাছে নির্মিত ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। ফারাক্কা পয়েন্টের প্রায় ৪০ হাজার কিউসেক পানি চলে যাচ্ছে হুগলি ও ভাগিরথি নদীতে। একযোগে ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের প্রায় চারশটি পয়েন্ট থেকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। এছাড়া ১৩ হাজার ছয়শ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে তিনটি বৃহদাকার ক্যানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। এই ক্যানেল তিনটিতেও পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের আগে গঙ্গার তথা বাংলাদেশের পদ্মার ৯০ শতাংশ পানিই অবৈধভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। এভাবে চলতে থাকলে ন্যায্য হিস্যা দূরে থাকুক, বাংলাদেশ এক সময় পানিই পাবে না। পদ্মাও হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অন্ধকারে। কিন্তু সবকিছু জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে প্রতিবাদ যেমন জানাচ্ছে না তেমনি দাবি জানাচ্ছে না পানির ন্যায্য হিস্যার জন্যও। এমন অবস্থার সুযোগ নিয়ে সবে পেরিয়ে আসা বছরেও ভারত চুক্তি লংঘন করেছে এবং বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক কম পানি দিয়েছে। সে কারণে পদ্মা তো বটেই, দেশের অন্য ৫৪টি নদ-নদীও প্রায় শুকিয়ে গেছে।
পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় মাওয়া থেকে ক্যাওড়াকান্দি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথে যাতায়াতের সময় একটি-দুটি নয়, কয়েকটি পর্যন্ত স্থানে প্রতিদিনই যাত্রী ও যানবাহনসহ ফেরি আটকে পড়ছে। তারপর কয়েক ঘণ্টা লাগছে ড্রেজিং করে ফেরিগুলোকে আবারও চালু করতে। এ অবস্থায় পড়তে হচ্ছে খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারিপুর, কুষ্টিয়া এবং বরিশালসহ বহু এলাকার মানুষকে, যারা মাওয়া-ক্যাওড়াকান্দি এবং নগরবাড়ি-দৌলতদিয়া হয়ে যাতায়াত করেন। সেই সাথে রয়েছে শত শত পণ্যবাহী যানবাহনও। ফলে সব মিলিয়েই বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
ওদিকে যারা যাতায়াত করেন তাদের সকলকেই পদ্মার করুণ দশা দেখে বিস্মিত ও দুঃখিত হতে হচ্ছে। কারণ, পদ্মা সেতুর কারণে দৃশ্যত কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে হলেও পানি কমতে কমতে পদ্মা এতটাই রুগ্ন, শীর্ণ ও অগভীর হয়ে পড়েছে যে সে কথা ভাবতে পারেন না সচেতন ও অভিজ্ঞজনেরা। তারা বলে থাকেন, বহুস্থানে চরই শুধু পড়েনি, কোনো কোনো চর রীতিমতো বসবাসযোগ্যও হয়ে উঠেছে। বহু পরিবার ওইসব চরে গিয়ে বাসাবাড়ি বানিয়ে বসবাস করতেও শুরু করেছে। সে কারণে চলছে চর দখলের প্রতিযোগিতা। উল্লেখ করার মতো দ্বিতীয় বিষয়টি পানির গভীরতা। ফেরি চলাচল করার জন্য মাত্র ছয়-সাত ফুট গভীরতা দরকার। সেটাও এখন নেই পদ্মার বেশির ভাগ স্থানে, যার জন্য যখন-তখন ডুবোচরে আটকে পড়ছে ফেরিগুলো। সব মিলিয়েই এককালের প্রমত্তা পদ্মা এখন খাল-বিলের পর্যায়ে নেমে এসেছে।
একটি নদীর জন্য এর চাইতে করুণ পরিণতির কথা কল্পনা করা যায় না। বলা বাহুল্য, এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস। সে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত সত্য হলো, ভারতকে প্রথমে সুযোগ দিয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, সে চুক্তির ভিত্তিতেই ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল ভারত। কথা ছিল, ফারাক্কা বাঁধ সম্পূর্ণরূপে চালু করার আগে শুষ্ক মৌসুমে প্রাপ্ত পানির পরিমাণ নিয়ে উভয় পক্ষ যাতে সমঝোতায় আসতে পারে সে উদ্দেশ্যে ভারত প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ফিডার ক্যানেল চালু করবে। সে অনুসারে ভারত ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল। কিন্তু ৪১ দিনের পরও ভারত ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি প্রত্যাহার বা তুলে নেয়া অব্যাহত রাখে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করেই ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুমে একতরফাভাবে গঙ্গার পানি হুগলি নদীতে নিয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফিডার ক্যানেল চালু করার পর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মায় পানি প্রবাহ যেখানে ছিল ৬৫ হাজার কিউসেক সেখানে ১৯৭৬ সালে তার পরিমাণ নেমে আসে মাত্র ২৩ হাজার ২০০ কিউসেকে। এর প্রধান কারণ ছিল ফিডার ক্যানেল দিয়ে ভারতের যথেচ্ছ পরিমাণে পানি প্রত্যাহার।
এভাবেই শুরু হয়েছিল ভারতের পানি আগ্রাসন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার পর ভারত নতুন করে সুযোগ নিয়েছিল। সে বছরের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পর, ১৯৯৭ সালের মার্চেই ভারত তার পানি আগ্রাসনকে ভয়ংকর করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী মার্চের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিনের চক্রে বাংলাদেশের প্রাপ্য যেখানে ছিল ৩৫ হাজার কিউসেক, ভারত সেখানে দিয়েছিল গড়ে ২১ হাজার কিউসেক। সর্বনিম্ন পরিমাণ পানি পাওয়ার রেকর্ডও স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের মার্চেইÑ ২৭ মার্চ বাংলাদেশ পেয়েছিল মাত্র ছয় হাজার ৪৫৭ কিউসেক। এমন অবস্থার কারণ, ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ না রাখার পরিপূর্ণ সুযোগ নিয়েছিল ভারত। একই চুক্তির আড়াল নিয়ে ভারত এখনও শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করে চলেছে।
ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার হয়ে পদ্মার পাশাপাশি যমুনা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদও পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থার কারণ সম্পর্কে দৈনিক সংগ্রামসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত ৩৯ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ৭২০ বর্গকিলোমিটারের বেশি নতুন নতুন চর পড়েছে এবং একই সময়ে এর তলদেশ ভরাট হয়েছে ২২ ফুট। আদি অবস্থায় পুরনো ব্রহ্মপুত্রের গড় প্রশস্ততা যেখানে ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার বর্তমানে সেখানে একই প্রশস্ততা মাত্র ১২০ থেকে ২২০ মিটারের মধ্যে এসে ঠেকেছে। উজান থেকে পানি কম আসায়, খনন না করায় এবং নদের বুকে পলি ও বালু জমে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নদের দুই পাড়ের ফসলি জমিতে তীব্র সেচ সংকট দেখা দিচ্ছে প্রতি বছর। একই অশুভ পরিণতির শিকার হচ্ছে যমুনাও
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের উজানে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় সবগুলো শাখা ও উপনদীতে অসংখ্য বাঁধ ও প্রকল্প নির্মাণ করেছে ভারত। এসব বাঁধ ও প্রকল্পের কারণে নদের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ভয়ানকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একযোগে ভরাট হয়ে যাচ্ছে তলদেশও। এভাবেই পানির ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। বছরের পর বছর ধরে একই কারণে নব্য হারিয়ে ক্ষীণকায় খালের মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে ব্রহ্মপুত্ররÑ যা মাত্র দশক চারেক আগেও ছিল উত্তাল ও প্রমত্ত একটি নদ।
এর প্রতিক্রিয়ায় শুষ্ক মওসুমের শুরুতেই বাংলাদেশের যমুনায় বিভিন্ন আকারের অসংখ্য চরের বিস্তার ঘটে চলেছে। জেগে উঠছে অনেক ডুবোচরও। যমুনায় কমে যাচ্ছে পানির উচ্চতা এবং প্রশস্ততা। একযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি তথা চাষাবাদ, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ চলাচল। মৎস্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ব্রহ্মপুত্রে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অনেক কমে যাওয়ায় বিভিন্ন চ্যানেলের নৌরুটে নৌ যোগাযোগ এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নয়তো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সে কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও মাঝি-মাল্লাদের দুর্ভোগ পৌঁছে গেছে চরমে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ প্রতিবাদ না জানালে এমন অবস্থা চলতেই থাকবে এবং পরিণতিতে বাংলাদেশের শুধু সর্বনাশই ঘটবে। এজন্যই সরকারের উচিত ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানানো এবং ন্যায্য হিস্যা আদায়ের চেষ্টা করা।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম