মুরগি দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সবজির দামও কমছে না। তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে চাল, ডাল, চিনি, আটা, ডিম, রসুনসহ সব ধরনের মসলার দামও নতুন করে বেড়েছে। আগের দিন একই পরিমাণ জিনিস কিনতে যত টাকা খরচ করেছিলাম, আজকে সেই বাজার করতে ৫০০ টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে।’ বাজার খরচের এই হিসাব দিচ্ছিলেন তালতলায় বাজার করতে আসা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে জিনিসের দামও তত বাড়ছে। সংসার চালাতে আমাদের জান বের হয়ে যাচ্ছে। আর পারছি না। চলতি সপ্তাহেও নতুন করে জিনিসের দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করে আফরোজা খাতুন বলেন, আগে যখন পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম তখন পুরো মাসের বাজার মোটামুটি কেনা যেতো। এখন একই টাকার বাজার মাসের অর্ধেক সময়ও যায় না।
বিজ্ঞাপন
বাজারে এসে খরচের হিসাব মেলাতে পারি না। তিনি বলেন, করলার দাম ১২০ টাকা আর পটলের দাম ১০০ টাকা, ভাবা যায়? আমিষের সকল উৎসের দাম বেড়েছে। ছেলেমেয়েদের ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া ফার্মের মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়ে গতকাল ২১০-২১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজিতে। মুরগির বাজারে অস্থিরতার সঙ্গে বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০-৭৫০ টাকা। আর খাসির মাংসের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১০৫০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া বাজারে ডিমের দামও চড়া। প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা যা একমাস আগেও ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
মুরগি, মাংস ও ডিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রায় সব ধরনের মাছের দামও বেড়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চাষের মাছের দাম। এ ছাড়া নদী কিংবা উন্মুক্ত জলাশয়ে যেসব মাছ বিক্রি হয় তার দামও ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কিছুদিন আগেও বাজারে ১৫০-১৬০ টাকা বিক্রি হয়েছিল পাঙাস মাছ। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা কেজিতে। আর ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া তেলাপিয়া মাছের দাম ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে দেশি টেংরা, শিং ও বোয়াল মাছের দাম কেজিতে অন্তত ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকায়। এদিকে এসব মাছের পাশাপাশি ইলিশ মাছের দামও বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকায়। মাছের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তালতলার মাছ বিক্রেতা মারুফ বলেন, মাছের খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। এজন্য প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। এটা আর কমার সম্ভাবনা কম।
ওদিকে বাজারে সবজির দামের খুব একটা হেরফের হয়নি। তবে করলা, ঢেঁড়স, বরবটি ও পটলের দাম চড়া। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ও পটল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজিতে। বিক্রেতারা জানান, এখনো এসব সবজির মৌসুম আসেনি। তাই দাম বেশি। এ ছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, প্রতি কেজি নতুন আলু ২৫-৩০ টাকা, টমেটো ৩০-৩৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও পেঁপে ২৫-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে সরু চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে মাঝারি আকারের চাল ও চিনিগুড়া চালের দাম। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকা। আর মাঝারি আকারের পাইজাম বা লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া সরু চাল ৭২-৭৫ টাকা ও মোটা চাল ৫০-৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও বাজারে সেই দামে পাওয়া যাচ্ছে না খোলা চিনি। বাজার থেকে খুচরা খোলা চিনি কিনতে হলে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। অন্যদিকে প্যাকেটজাত চিনির দেখাই মিলছে না দোকানে। তালতলা বাজারের মিতুল জেনারেল স্টোরের কর্মী বলেন, কোম্পানিগুলো প্যাকেটজাত চিনি দিচ্ছে না। এজন্য আমরা প্যাকেট চিনি বিক্রি করতে পারছি না। খোলা চিনি বেশি দামে বিক্রি করা প্রসঙ্গে তিনি পাইকারিতে বেশি দামে কেনার কথা জানান।
সোর্স : মানবজমিন