সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণের গণতান্ত্রিক, নাগরিক ও মৌলিক অধিকার নিয়ে ভানুমতির খেলায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আহুত শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলাম বিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কমানো ও নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাইতুল মোকাররামের উত্তর গেইটে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্য পুলিশ কর্তৃক অনুমতি প্রদান না করার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে দেশে সকল দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে ও জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, আইন ও সাংবিধানিক শাসন এবং অবাধ গণতন্ত্র চর্চাকে নির্বিঘ্ন করার জন্যই আমরা মরণপণ মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে’। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ক্ষমতলিপ্সা ও আদর্শিক দেউলিয়াত্বের কারণেই আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই অধরাই রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন দিলেও তারাই ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। একই বছরে ১৬ই জুন রাষ্ট্রায়ত্ব ৪টি পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে নিজেদের অগণতান্ত্রিক, বাকশালী ও ফ্যাসীবাদী চরিত্র জনগণের সামনে উম্মুক্ত করে দিয়েছিল। মূলত, আওয়ামী গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ছিল শুধুই কথা মালার ফুলঝুড়ি ও শুভঙ্করের ফাঁকি বৈ কিছু নয়। তিনি বাইতুল মোকাররামের উত্তর গেইটে জামায়াতকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি না দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সুষ্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’। অনুচ্ছেদ ৩৮-এ বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি ও সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, জামায়াতের পক্ষ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাইতুল মোকাররামের উত্তর গেইটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে করার অনুমতি চাওয়া হলেও তা না দিয়ে সরকার সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। অথচ সরকারি দলের নেতানেত্রীদের নাম গণতন্ত্রবান্ধব নানা বিশেষণে বিষেশিত করে জনগণের কাছে হাস্যরসের পাত্র বানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামায়াতে ইসলামী ন্যায় ইনসাফের ভিত্তিতে সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাকিস্তানে আমলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ‘কপ’ ও ‘ডাক’-এর মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানেও জামায়াত ছিল আপোষহীন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে জামায়াত ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী চৌর্যবৃত্তি ও নৈশভোটের সংসদ ছাড়া সকল সংসদেই জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু সরকার জামায়াতকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা ক্রমবর্ধমান জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পুলিশ সহ রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করে একটি আদর্শবাদী দলের অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে চায়। কিন্তু পুলিশ দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না এবং একদিন এজন্য ক্ষমতাসীনদেরই চড়া মূল্য দিতে হবে। তিনি সরকারকে অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র পরিহার করে সাংবিধানিক এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসার আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবেই নাস্তিক্যবাদী ও বিজাতীয় আদর্শ জাতীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। সে ষড়যন্ত্রের ষোলকলা পূর্ণ করার জন্যই জাতীয় পাঠসূচিতে বিবর্তনবাদ, হিন্দুত্ববাদ ও ইসলাম বিরোধী অধ্যায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে রীতিমত দুর্বিষহ করে তুলেছে। তারা আগামীতে আবারো তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র জনগণ সফল হতে দেবে না। তিনি সরকারকে টালবাহানা পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ রাজপথে আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমে গণদাবি আদায় করেই ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।