আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসন, লুটপাট ও উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই লাগামহীন মূল্যস্ফীতি ঘটেছে এবং দেশে মহাদুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি আজ রাজধানীতে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১০ গোল চত্তর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, ইয়াছিন আরাফাত, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ও জামাল উদ্দীন, প্রাইভেট মহানগরী শূরা সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার ও আব্দুল মতিন খান এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের শিবির সভাপতি জাকির হোসেনপ্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতির হার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের দেশেই খাদ্যপণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম এখন সর্বনিম্ন হলেও দেশে অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ দেশে ভয়াবহ লোড শেডিং চলছে। লাগামহীন মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিকতায় গত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য এবং সেবার মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ অতিক্রম করেছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়। আগস্টে মূল্যস্ফীতির এই হার ১১ বছর ৩ মাস বা গত ১৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা জনজীবনকে রীতিমত দুর্বিসহ ও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তাই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক কোন অধিকার নেই। তিনি ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহবান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ আর দুর্ভিক্ষ সমার্থক শব্দ। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদের অপকর্মের কারণেই ১৯৭৪ সালে দেশে মহাদুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল। তদানীন্তন বাকশালী সরকারের হিসাব মতেই এই দুর্ভিক্ষে দেশে ২৭ হাজার মানুষের অনাহারে মৃত্যু ঘটেছিল। বেসরকারি হিসেবে অনুমানিক ১ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার বনী আদম প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বস্ত্রাভাবে বাসন্তিদের কলাপাতায় সম্ভ্রম ঢাকতে হয়েছিল। জঠরজ্বালা মেটাতে শুধু একটা রুটির জন্য ক্ষুধার্তদের লঙ্গরখানায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এই মর্মান্তিক দৃশ্য কখনো ভোলার নয়; ভোলা যায় না। আর এই দুর্ভিক্ষ ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতি দুর্ভিক্ষ। তাই এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আবারো ‘৭৪-এর চেয়েও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পূনারাবৃত্তি ঘটবে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীনরা কেয়ারটেকার সরকারের গণদাবি পাশ কাটাতে নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশলের আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত আবারো ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নতুন করে ক্ষমতায় এসে জনগণের ওপর অপশাসন ও দুঃশাসন অব্যাহত রাখতে চায়। এজন্য তারা ইভিএম থিউরী আবিস্কার করেছে। তিনি বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে মামলা, হামলা ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করছে। ইতোমধ্যেই সমাবেশে পুলিশ গুলী চালিয়ে বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাই এই জুলুমবাজ সরকারের কাছে কোন দাবি করে লাভ নেই বরং এখন সরকারকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের নির্বাচনে বাধ্য করতে দুর্বার ও যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ এখন প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে। তারা এখন নিজেদের ছাঁয়াকেও ভয় পাচ্ছেন। ক্ষমতাসীনরা আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। ফলে তারা এখন সৎ, প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিভাবান ও দেশপ্রেমী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। চলছে বাধ্যতামূলক অবসরের মচ্ছব। কারো কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা দেয়ারও হুমকী দেয়া হচ্ছে। সরকার এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের কল্পকাহিনী প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। অথচ তারাই ১৯৯৬ সালে আমলা বিদ্রোহ ও কথিত জনতার মঞ্চকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। সরকার নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পুরো আমলাতন্ত্রকে সরকারের আজ্ঞাবহ বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের কোন রাজনৈতিক শক্তির লেজুরবৃত্তি না করে প্রজাতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে এবং পুরোপুরি পেশাদারিত্বের সাথে আইন ও সংবিধানের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল হয়ে ইনসাফপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।