দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য একমাত্র মহান আল্লাহর দাসত্ব ও রাসুল (সা.) এর অনূসৃত আদর্শকে যথাযথভাবে অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সিরাতুন্নবী (সা.) আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, রাসূল (সা.) বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছিলেন। পবিত্র কালামে হাকীমের সূরা আল আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি।’ মূলত আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথ ও রাসূল (সা.) অনুসৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই সমাজ-রাষ্ট্রে অশান্তি ও অবক্ষয়ের জয়জয়কার চলছে। তিনি বিশ্বনবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন ভূমিকা রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, গোটা বিশ্বেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎকর্ষতা এসেছে। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, মানুষের বহিরাভরণ জৌলুসপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন হলেও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তির প্রত্যাশা বরাবরই অধরায় থেকে গেছে। মূলত ইসলামী আদর্শের বিচ্যুতিই এই অশান্তি ও অবক্ষয়ের মূল কারণ। রাসূল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা অহীর বিধান অনুসরণের মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের মধ্যে যারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণে শাসনকার্য পরিচালনার চেষ্টা করেছিলেন তারাও সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, প্রগতি, উন্নয়ন, অগ্রগতি সর্বোপরি ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সফল ও সার্থক হয়েছিলেন। দার্শনিক জর্জ বার্নার্ডশ-এর ভাষায়, ‘আমার বিশ্বাস নবী মুহাম্মদের মত কোন ব্যক্তি যদি বর্তমান বিশ্বের একনায়কের পদে আসীন হতেন, তাহলে তিনিই বর্তমান বিশ্বের সমস্যাবলীর এমন সমাধান দিতে পারতেন, যার ফলে সমস্ত বিশ্বে কাক্সিক্ষত শান্তি ও সুখ নেমে আসত।’ মূলত মানব রচিত মতবাদের মাধ্যমে কোন ভাবেই বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে স্থায়ি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে অহীর বিধান অনুসরণের কোন বিকল্প নেই। তিনি ওহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে অদ্বিতীয় ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কালামে পাকে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম’। (সুরা আল ইমরাম-১৯) মূলত আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার মিশন দিয়েই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। কালামে হাকীমের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ( সুরা আল ইমরান-১১০) তাই বিশ্ব মানবতার ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য আমাদের দাওয়াতি কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবাহী ও অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। সরকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে একটি স্বৈরতান্ত্রিক ও পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা অতীতের মতো সাজানো ও পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা আবারো কুক্ষিগত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর। কিন্তু সচেতন জনতা সরকারে সে স্বপ্নবিলাস কখনো সফল হতে দেবে না। তিনি টালবাহানা পরিহার করে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হন্তান্তর করে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনমত যাচাইয়ের আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ রাজপথেই গণদাবি আদায় করবে।