ইসলামী শাসনতন্ত্রের উৎস
এক: কুরআন মজীদ- সর্বপ্রথম উৎস হচ্ছে কুরআন মজীদ। এতে আল্লাহ তা’য়ালার হুকুম-আহকাম ও বিধি-নিষেধ লিখিত রয়েছে। কুরআনে উল্লিখিত এ বিধি-বিধান গোটা মানবজাতিহর সমগ্র জীবনের (Social Life) প্রত্যেক দিক ও বিভাগের সংশোধন ও সংগঠনের মূলনীতি ও চিরন্তন ব্যবস্থা তাদের প্রয়োজনানুসারে দেয়া হয়েছে। মুসলমানগণ তাদের রাষ্ট্র ও সরকার কোন্ নিয়ম-বিধান এবং কোন্ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসারে স্থাপিত করবে তাও কুরআন মজীদে সুস্পষ্টরূপে বলে দেয়া হয়েছে।
দুই: সুন্নাতে রাসূল- ইসলামী শাসনতন্ত্র দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে রাসূলুল্লাহর সুন্নাত। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) কুরআন মজীদের বিধি-নির্দেশ এবং এর উপস্থাপিত মূলনীতিসমূহকে আরবের সরযমীনে কিরূপে বাস্তবায়িত করেছিলেন, ইসলামকে কল্পনা ও আদর্শবাদের স্তর হতে টেনে বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, ইসলামের পরিকল্পনার উপর একটি আদর্শ সমাজ তিনি কিরূপে গঠন করেছিলেন, অতপর সেই সমাজকে সুসংবদ্ধ ও সুসংগঠিত করে কিভাবে একটি রাষ্ট্রের রূপ দিয়েছিলেন এবং সেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগসমূহ কিভাবে পরিচালিত করেছিলেন- ইসলামী জীবন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা প্রসংগে এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিত জবাব পেতে হলে “সুন্নাতে রাসূল” ভিন্ন অন্য কোন উপায় নেই। এমনকি কুরআন মজীদের প্রকৃত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, তা সঠিকরূপে জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে “সুন্নাতে রাসূল”। বস্তুত “সুন্নাতে রাসূল” হচ্ছে কুরআন মজীদের উপস্থাপিত নীতিসমূহের বাস্তবায়ন (Application)। তা হতে ইসলামী শাসনতন্ত্র সম্পর্কে অত্যন্ত মূল্যবান দৃষ্টান্ত ও তুলনা (Precedents) লাভ করা যায়- শাসনতান্ত্রিক ঐতিহ্যের (Convention to the constitution) এক বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গ্রহণ করা সম্ভব।
তিন: খিলাফতে রাশেদার কর্মধারা- ইসলামী শাসনতন্ত্রের তৃতীয় উৎস হচ্ছে খিলাফতে রাশেদার কর্মধারা, হযরত নবী করীম (সা)-এর পর খোলাফায়ে রাশেদীন যেভাবে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তার বাস্তব উদাহরণ এবং ঐতিহ্যের বিস্তারিত বিবরণে হাদীস, ইতিহাস ও জীবনচরিতের বিরাট গ্রন্থসমূহ পরিপূর্ণ। এসব জিনিস বস্তুতই আমাদের জন্য অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন সন্দেহ নেই। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও নির্দেশ-উপদেশের যে ব্যাখ্যা সাহাবায়ে কিরাম সর্বসম্মতিক্রমে করেছেন- ইসলামের পরিভাষায় যাকে বলে ‘ইজমা’ এবং শাসনতান্ত্রিক ও আইন সংক্রান্ত ব্যাপরসমূহে খোলাফায়ে রাশেদীন সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করার পর যে সিদ্ধান্ত করেছেন, দুনিয়ায় মুসলমানের জন্য তা অকাট্য যুক্তি বিশেষ এবং অপরিহার্যরূপে গ্রহণীয়। তাকে যথাযথভাবেই সমর্থন করতে হবে। কারণ কোন ব্যাপারে সাহাবাদের মতৈক্য হওয়ার অর্থ এই যে, তা-ই ইসলামী আইনের প্রামাণিক ব্যাখ্যা এবং বিশ্বস্ত কর্মপদ্ধতি। পক্ষান্তরে যে বিষয়ে তাঁদের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিষয়ে যে একাধিক ব্যাখ্যার অবকাশরয়েছে, এটা এই মতবিরোধ হতে পরিষ্কার প্রমাণিত হয়। কাজেই এসব বিষয়ে যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে এদের মধ্য হতে বিশেষ একটি মত গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু যেখানে তাঁদের মধ্যে পরিপূর্ণ মতৈক্য হয়েছে, সেখানে তাঁদের সিদ্ধান্ত অনিবার্যরূপে একই ব্যাখ্যা এবং একই কর্মনীতিকে বিশুদ্ধ ও প্রমাণসহ উপস্থিত করে। কারণ তাঁরা হযরত নবী করীম(সা)-এর ব্যক্তিগত ছাত্র এবং তাঁর নিকট সরাসরিভাবে দীক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন। কাজেই তাঁদের সকলেরই সমবেতভাবে ভুল করা কিংবা দ্বীন ইসলামকে বুঝার ও হৃদয়ংগম করার ব্যাপারে সঠিক পথ হতে বিচ্যুত হওয়া কোন মতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
চার: মুজতাহিদীনের সিদ্ধান্ত ও মীমাংসা- মুসলিম মুজতাহিদ্গণ (কুরআন-হাদীসের ভিত্তিতে) নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও অন্তর্দৃষ্টির আলোকে বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক সমস্যার যে সমাধান পেশ করেছেন, ইসলামী শাসনতন্ত্রের তা চতুর্থ জ্ঞান-উৎস। মুজাহিদদের এই সিদ্ধান্ত ও মীমাংসাসমূহ ইসলামী শরীযাতে এক অকাট্য প্রমাণ হওয়ার মর্যাদান না পেলেও ইসলামীশাসনতন্ত্রের অন্তর্নিহিত ভাবধারা এবং এর নীতি-বিধানসমূহ অনুধাবন করার জন্য নির্বুল ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশ করে তাতে সন্দেহ নেই। এই চারটি বিষয়ই হচ্ছে আমাদের ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জ্ঞান-উৎস। ইসলামী হুকুমাতের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হলে তাদের State Law, Common Law এবং তাদের শাসনতান্ত্রিক প্রচলন ও ঐতিহ্য (Conventions of the Constitution) হতে এক একটি খুঁটিনাটি পর্যন্ত গ্রহণ করে কাগজের উপর লিখতে হবে। আর অনেক শাসনতান্ত্রিক নিয়ম-নির্দেশ তাদেরকে তাদের আদালতসমূহের ‘রায়’ হতে বেছে বেঘে গ্রহণ করতে হবে।
বইটি ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন