বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ক্রীড়া-সংস্কৃতিচর্চা স্বাস্থ্যবান ও মননশীল জাতি গঠন এবং নতুন প্রজন্মের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়ক হয়। তাই যুবসমাজকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে হলে সুস্থ্যধারার ক্রীড়া-সংস্কৃতি চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। তিনি প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসার জন্য সরকার, ক্রীড়া সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, চ্যারিটি সংস্থা সহ সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগীর বাড্ডা থানা পূর্ব আয়োজিত প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর মো. কুতুবউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা। আরও উপস্থিত ছিলেন থানা সেক্রেটারি মুনজের আলী, জামায়াত নেতা কে এ মিজান, আরাফাত হোসাইন, মাসুদুর রহমান রানা ও মাওলানা সোলাইমান এবং বাড্ডা উত্তর শিবির সভাপতি সালাহউদ্দীন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশ ও জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে একটি অগণতান্ত্রিক ও গণবিচ্ছিন্ন সরকার। তারা অতীতের মত তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোকে দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়ে ভন্ডুল করা হচ্ছে। নির্বাচনী ময়দানকে একতরফা করার জন্যই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়ে গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না মৃত, প্রবাসী, হজ্জযাত্রী, চলৎশক্তিহীন ও গুরতর অসুস্থ্য ব্যক্তিরাও। এমতাবস্থায় চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সংলাপের মাধ্যমে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তা সরকারের সদিচ্ছার অভাবে যথাযথ কাজে লাগানোর পরিবর্তে উল্টো সময়ক্ষেপন ও জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী কোন সংলাপের মাধ্যমে অতীতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই সংকট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
মহানগরী আমীর বলেন, দেশ ও জাতির ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। মূলত প্রচলিত ধারার রাজনীতি দেশ ও জাতিকে অধিকারের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশ, জাতি, গণতন্ত্র, ইসলামী মূল্যবোধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন একটি শক্তির উত্থানের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে যারা প্রচলিত ধারার বাইরে এসে দেশ ও জাতির মুক্তি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, ঈমান-আকিদা, তাহজিব-তামুদ্দনের হেফাজত, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে কুন্ঠাবোধ করবে না। দেশ ও জাতি সেই শক্তিকে স্বাগত জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, দেশে পেশীশক্তি ও জুলুমবাজীর রাজনীতির বিপরীতে বুদ্ধিভিত্তিক ও কল্যাণমূখী রাজনীতি এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। তাই প্রচলিত ধারার নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে দেশে ইতিবাচক, ন্যায়সঙ্গত ও কল্যাণমুখী রাজনীতির সূচনা করতে হলে যুব সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি করে নতুন শতাব্দীর বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বেশি বেশি কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা জরুরি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপরও সতর্ক দৃষ্টি দেয়া দরকার। মূলত দেশ ও জাতিকে বর্তমান শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হলে যুব সমাজ, দেশপ্রেমী জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই সংলাপ নামের নতুন নাটক শুরু করেছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও নেতিবাচক মানসিকতার কারণেই সংলাপ প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। সরকার বিরোধী দলের দাবি উপেক্ষা করতে সংবিধানকে বাহানা হিসেবে উপস্থাপন করছে। মূলত সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হলে সংবিধান কোন বাধা নয়। ১৯৯০ সালের কেয়ারটেকার গঠিত হয়েছিল সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা যেতে পারে। তাই যেকোন জাতীয় সমস্যা সমাধানে সংবিধান কোন ভাবেই প্রতিবন্ধক নয় বরং রাজনৈতিক ঐক্যমতই যথেষ্ঠ।
মহানগরী আমীর বলেন, সংবিধানে ১২৩ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ রেখে নির্বাচন করা যাবে । তবে ১২৩ (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা যাবে। সংবিধানের ৫৬ (৪) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে যাওয়া এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিধান রয়েছে। ১৯৭৩ সালেও সংসদ বিলুপ্তির পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাই সংসদ ভেঙে নির্বাচন অসাংবিধানিক একথা সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয়। মূলত সরকার সংবিধানের কথা বলে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর। তিনি সরকারের অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আচরণের মোকাবেলায় যুব সমাজ সহ সমাজের সকল পেশা শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।