বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমরা এখন নিজস্ব সংস্কৃতির স্বকীয়তা প্রায় হারাতে বসেছি। আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাবে আমাদের দেশে যে ধরনের সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছে তার সাথে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতি, বোধ-বিশ্বাস ও তাহজীব-তমুদ্দনের কোন সম্পর্ক নেই। তাই আমাদের জাতীয় ঐহিত্য ও নিজস্ব ধারার সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সৃজনশীল ও সুস্থ্যধারার সংস্কৃতি চর্চাকে উৎসাহিত করতে হবে। তিনি কথিত সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির বিষয়ে সকর্ত থাকতে সংস্কৃতিসেবী ও পৃষ্ঠপোষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় আমাদেরকে একদিন গড্ডালিকা প্রবাহে হারিয়ে যেতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীর একটি খেলার মাঠে ‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর প্রলয় নতুন সৃজন বেদন, আসছে নবীন জীবন হারা অসুন্দরের করতে ছেদন’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের রমনা জোন আয়োজিত আন্তঃথানা ফুটবল টুর্নামেন্ট ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য ড. হাবিবুর রহমান, আতাউর রহমান সরকার, এ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, হাফেজ মিজানুর রহমান, সালাহউদ্দীন, এ আর এম মনির, সাইফুল ইসলাম, আলাউদ্দীন মোল্লা ও আব্দুল্লাহ সাকী প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই ব্যক্তি যখন মনুষত্বকে বিকশিত করতে সমর্থ হয় তখন শ্রেষ্ঠত্বের ভূষণে ভূষিত হন। কিন্তু ব্যক্তি যখন মনুষত্ব হারিয়ে ফেলে তখন নেমে যায় পশুত্বেরও নিন্ম পর্যায়ে। তাই মানুষকে মনুষত্ব অর্জন করে চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘটিয়ে বাস্তবজীবনে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আর তা হতে হবে অবশ্যই অহীর নির্দেশনা অনুযায়ি। মানুষ যখন অহীর জ্ঞানে আলোকিত হয়, তখন জীবনে পূর্ণতা আসে। মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে দুনিয়াতে খলিফা তথা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আর প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো তার মালিকের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা। কিন্তু আমারা সে কেক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল হতে পারিনি বলেই আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র এখনও গণমুখী ও কল্যাণকামী হয়ে ওঠেনি। ফলে সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে অবক্ষয়, অনিয়ম ও নানাবিধ জটিলতা। মানবতার বিপরীতে সমাজে স্থান করে নিয়েছে পশুত্ব, সুন্দর ও সুকুমার বৃত্তির চর্চার বিপরীতে আমাদের জাতীয় জীবনে নেমে এসেছে অনাসৃষ্টি। সংস্কৃতির নামে চলছে অপসংস্কৃতি। তাই আত্মপীড়িত ও দুর্দশাগ্রস্থ মানবতাকে বাঁচাতে হলে জামায়াতের ইসলামীর সকল স্তরের জনশক্তিকে চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘঠিয়ে অহীর নির্দেশনা অনুসরণ করে গণমানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দাওয়াত সম্প্রসারণের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রতিটি ঘরে দ্বীনে হকের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী সহ জনসাধারণের মধ্যে আধুনিক ও ইসলামী জ্ঞানের সুসমন্নয় ঘটিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকল শ্রেণির নাগরিকদের যোগ্যতর হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বেশি বেশি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য চর্চার কোন বিকল্প নেই। গণমানুষের সাথে আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের কল্যাণে নিরলসবাবে কাজ করতে হবে। আর এটিই হবে উত্তম দাওয়াত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দায়িদের বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। কালামে হাকীমে ঘোষিত হয়েছে. ‘যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ। তার কথা অপক্ষো উত্তম কথা আর কার হতে পারে’? (সুরা-হা মীম-৩৩। অপর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে’। (সুরা নাহল-১২৫)
তিনি আরও বলেন, ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও দেশে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না থানায় জনগণ রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ না করে এমন কিছু করছে যার সাথে দেশ ও জাতির স্বার্থের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। মূলত সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা ও প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হবে। হাদিসে রাসুল (সা.) এ বর্ণিত হয়েছে, ‘অত্যাচারী শাসকের নিকট সত্য কথা বলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ’। (সুনানে আবু দাঊদ , তিরমিযী , ইবনে মাজাহ ) তিনি এই উত্তম জিহাদের অংশ নিতে সকলের প্রতি আহবান জানান।